আলোর মনি রিপোর্ট: ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানীদের হাতে স্বামীকে হারিয়ে ছেলে-মেয়েদের মুখে দু’বেলা দু’মুঠো খাবারের জন্য ২০বছর ধরে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে হাত পেতে বেড়াচ্ছেন হতদরিদ্র এক বৃদ্ধা রহিমা বেগম।
মানুষের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে হাত পেতে যা আনে তা দিয়েই দুঃখ-কষ্টে অতিবাহিত হচ্ছে তার জীবন।
ছোট্ট একটি ঝুপড়ি ঘর, সেটি থাকার যোগ্য নয়। শুধু নাম মাত্রই ঘর। ঘরের ভিতর রাত কাটানোর মতো নেই কোন বিছানাপত্র। ঘুমোতে হয় ভাঙ্গা একটি বিছানায়। বৃষ্টি হলে সেই ঝুপড়ি ঘরে থাকা দুষ্কর। ফলে ঘুমোনোর জন্য আশ্রয় নিতে হয় পার্শ্বের অন্য কারও বাড়িতে।
তিনি জীবিকার তাগিদে সারাদিন ঘুরেন অন্যের দুয়ারে দুয়ারে। টিনের ঝাপড়া হলেও উপরের পুরোনো টিন অসংখ্য ছিদ্র দিয়ে ভরাপুর, যেন আকাশ দেখা যায়। ফলে দিনের বেলায় সূর্যের আলো এবং রাতে খোলা আকাশের তারা স্পষ্ট ভাবে চোখে পড়ে। তারপরও তার খোঁজ রাখেন না কেউ।
স্থানীয় বাসিন্দা বেলাল হোসেন সাংবাদিকদের জানান, কেমন অসহায় এই জননী। সন্তানরা এক বারও ভাবেনি! কোথায় থাকবে তার মা। কোথায় থাকবে তার রেখে যাওয়া শিশুটি। যুবক ৩ছেলে থেকেও কারো কাছে হয়নি তার ঠাই। এমন পরিস্থিতে সরকারি ঘর পাওয়ার যোগ্য হয়েও ৩দফায় সরকারি ঘর হলেও আজও তার ভাগ্যে জোটেনি একটি সরকারি ঘর।
রহিমা বেগম জানায়, মোর ছেলে-মেয়ে থেকেও নাই, ২০বছর ধরি একলায় একলায় এই ধাপরিত থাকোং। মানুষে থাকির জন্যে এইকন্যা করিদিছে। ৩ছেলে থাকিও নাই, কাউ পুশে না মোক। বড় ছেলে ঢাকায় রিক্সা চালিয়ে কোন রকম পরিবার চালায়। মেজে ছেলে চায়ের দোকানে কাজ করে। এক ছেলে ভুগছেন মরণ ব্যাধি নিয়ে। আর ছোট ছেলে যদিও কিছু দিতো ১বছর ধরে করোনার কারনে তার ও সংসার চলে না আর। আর বড় ছেলের মা মরা মেয়েটাকে মোর কাছোত দিয়ে গেছে। চেয়ারম্যান একনা বয়স্ক ভাতা করিদিছে তাও কোন বার টাকা পাং কোন বার না পাং তা মুই চলবার পাং না।
ঝরির দিনোত (বৃষ্টির সময়) থাকির সমস্যা হয়। সরকার কত কিছু দিয়ার নাগছে, মোক তা কই কি দেয় বাহে। কত কষ্ট করি রাইত কাটাং।
সীমাহীন ব্যাথা আর কষ্ট ভারাক্রান্ত মনে চোখ মুছতে মুছতে কথা বলছিলেন লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার মুন্সীর বাজার এলাকার তিস্তা পাড়ের রহিমা বেগম (৮০) ২০বছর থেকে ভিক্ষাবৃত্তি করে চলে তার সংসার। নিজের বলতে কিছুই নেই।
খড়ের বেড়া আর ফুঁটা টিনের ছাপড়া ঘরে বসবাস বৃদ্ধ রহিমা বেগমের। তিনি জীবিকার তাগিদে সারাদিন ঘুরেন অন্যের দুয়ারে দুয়ারে। বার্ধক্য বয়সে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে জরাজীর্ণ বসতঘরে আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটে তার। জনপ্রতিনিধিরা রাখেনা খোঁজ, আজও তার ভাগ্যে জোটেনি স্বপ্নের সেই ঘরটি। এলাকাবাসীর সহযোগীতায় তৈরী করে দেয়া ঝুঁপড়িতে কোন রকম রাত্রি যাপন করেন তিনি।
ওই এলাকার কালু নামে এক দিনমজুর কৃষক সাংবাদিকদের জানান, ছোট বেলা থেকেই দেখে আসছি তিনি মানুষের বাড়ি বাড়ি হাত পেতে কোন রকম চলেন, মানুষের বাড়িতে ঘুরে যা আয় হয় তা দিয়ে কোন রকম চলেন। এখন আর ভাল করে কানে শুনতে পারেন না। এক প্রকার শ্রবণ প্রতিবন্ধী তিনি। তাই আমি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন জানাই এনাকে যাতে একটা ঘরের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়।
এ বিষয়ে তুষভান্ডার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর ইসলাম আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, এ অসহায় মহিলা সরকারি ঘর পাওয়ার যোগ্য বলেই মনে করি।
কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ফেরদৌস আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, রহিমা বেগমের খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।